Duration 12:45

হিকমা ইসলামের উদ্দেশ্যপর্ব-২। নোমান আলী খানের বাংলা ডাবিংকৃত খুতবা।Nouman ali khan islamic lecture.

Published 6 Oct 2023

ইসলামের উদ্দেশ্য কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, বা ইসলামের সৈনিক কীভাবে তৈরি হবে, কীভাবে ইসলামিক কর্মীবাহিনী গড়ে ইসলামী কাজের জন্য প্রস্তুত করতে হবে সেই স্ট্রাটেজিক বা প্ল্যানের ধারাবাহিক বর্ণনায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেনঃ “তিনিই উম্মি বা নিরক্ষর জাতির মধ্যে তাদের একজনকে পাঠিয়েছেন রাসূলরুপে, যিনি তাদের নিকট ১। তাঁর আয়াতসমূহ (নিদর্শন, আয়াত) আবৃতি করেন,২। তাদেরকে পবিত্র করেন, ৩। শিক্ষা দেন কিতাব, ৪। ও হিকমাহ যদিও ইতোপূর্বে তারা ছিল স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায়”। — সূরা জুমুয়াহ – ২ ঠিক এই ধারাবাহিক পদ্ধতিতেই মক্কার সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট লোকেরা (আয়াতের শেষ- “যদিও ইতোপূর্বে তারা ছিল স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায়” ) সর্বাপেক্ষা উত্তম এবং দুনিয়ার নেতা হয়ে গিয়েছিল। এই ধারাবাহিক পদ্ধতিতে কাজ করে গেলে এমন নিকৃষ্ট লোকদেরকে এমন উচ্চতায় নিয়ে আসবেন আল্লাহ যে, আমি-আপনি কখনো চিন্তাই করতে পারবো না।কেউ নেশা করে, সে জানে নেশা খারাপ জিনিস। এটা জ্ঞান। “আর তাদের অন্যদের জন্যও যাদের সাথে এখনও মিলিত হয়নি। তিনি (আল্লাহ) পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান”। (আয়াত – ৩অর্থাৎ “অন্যদের জন্যও” একই ফর্মুলা – মাক্কার উম্মিরা ব্যতীত আমরা সবাই অন্যরা যাদের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবাদের কারোরই হয়তো সাক্ষাত হবে না কিন্তু আল্লাহ যেহেতু পরাক্রমশালী(আল-আযীয) বা সমস্ত রাজত্ব তারই এবং কর্তাও তিনি, তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং প্রজ্ঞাবান(আল-হাকীম) – তাই তাঁর সমস্ত রাজত্ব তাঁর পরাক্রমশলিতা এবং প্রজ্ঞার দ্বারা এই ফর্মুলাকে চিরন্তন করে দিলে সমস্ত জগতবাসীর উপর। অর্থাৎ ওহীর সেই সময় থেকে আগত-অনাগত যতলোক আসবে এবং এই ফর্মুলাকে কেন্দ্র করে চলবে, তারাও পাবে যদি আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্ত হয় (আয়াত-৪)। সুবহানাল্লাহ!!সুতরাং আজকে দিনের সমস্ত ইসলামী সংগঠনগুলো যদি ঠিক এই ধারাবাহিক বিবেচনায় নিজেদেরকে গড়ে তুলতে না পারে, সফলতা কখনই সম্ভব নয়। এটাই আল্লাহর বাণী কুরআনিক প্রজ্ঞার স্ট্রাটেজিক প্ল্যান , এটা তাঁর চুড়ান্ত জ্ঞানের হিকমাহর পদ্ধতি, কীভাবে সফলতা হওয়া যায় সেটার। আর আয়াতে যে ‘হিকমাহ’ শব্দটা রয়েছে তার অর্থ ইমাম মালিক ও শাফেয়ী (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেনঃ হিকমাহ হলো সুন্নাহ। হ্যা, ঠিক এটাই, কারণ সুন্নাহ হলো উদাহরণসহ প্রায়োগিক দিক আল্লাহর আয়াতসমূহ শিক্ষা দেবেন – পৃথিবীতে কি তাঁর নিদর্শনের অভাব রয়েছে? এবং আল্লাহ ক্রমাগতভাবে এসব নিদর্শন নিয়ে চিন্তাশীলদের জন্য শিক্ষা, উপদেশ, নিদর্শন রয়েছে বলেছেন। নিজের দিকে তাকালেই দেখতে পাই এই চক্ষু নিয়ে কতশত বিজ্ঞানী অবাক করা সব তথ্য দিয়েছেন। আল্লাহর এই ছোট্ট জিনিস নিয়ে কতশত গবেষণা। আল্লাহ এসব নিদর্শন নিয়ে, চারিপাশের গাছ, রঙ, সৃষ্টি, আকাশের চন্দ্র, সূর্য, দিন-রাতের আবর্তন, আসমান, জমিন – এসব নিয়েই চিন্তা করতে বলেছেন, গভীরভাবে গবেষণা করতে বলেছেন – যেন তিনি আমাদেরকে এসব নিদর্শন উপলব্ধির দোয়ার খুলতে বলছেন। এভাবে আল্লাহর প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখে একজন ব্যক্তি অভিভূত না হয়ে পারে না। তখন এই অভিভূতকে কাজ লাগিয়ে তাকে প্রস্তুত করতে হয় জীবনের উদ্দেশ্যের পথে। তখন অন্তরের যাবতীয় পবিত্রতা হয়ে পড়ে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অন্তরের পবিত্রতা ব্যতীত এই অন্তরে কোনো শিক্ষা, কোনো প্রজ্ঞা প্রবেশ করবে না। কোনো ভালো কথা অন্তরের প্রবেশ না করলে সে তদানুযায়ী (কিতাব) কাজ করবে না। অন্তরে পবিত্রতা থাকার দরুন সে তখন কোনো ভালো কথা শুনার জন্য প্রস্তুত হবে, ভালো কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে।তখন আল্লাহর কিতাবের যাবতীয় উত্তম জিনিসগুলো তার সম্মুখে তুলে ধরতে পারলে তার পবিত্র অন্তরের খুব সহজেই প্রবেশ করবে…কারণ যতগুলো বাঁধা থাকতে পারে সেসবই অন্তরের পবিত্রায় ধুয়ে-মুছে চলে গেছে।যখন সে আল্লাহর কিতাবের মাঝে কল্যাণ দেখতে শুরু করবে, তখন সে ইসলামের এই পবিত্রতাময় কল্যাণের পথে চলতে চাইবে, এ পথের কল্যাণ নিতে চাইবে, সে ইসলাম গ্রহণ এবং ইসলামের পথে চলতে চলতে এ থেকে কল্যাণ নেবে(হিকমাহ)। সুতরাং যার অন্তর এখনও পবিত্র হয়নি, প্রস্তুত হয়নি – আল্লাহর নিদর্শনাবলী না দেখে বা না পেয়ে, তাকে ইসলামী আইনের হিকমাহ শিক্ষা দেওয়া হলে কি সে সেটা নেবে? কারণ তার অন্তর নেওয়ার মত নেই, পবিত্র অন্তর পবিত্র কালামের পবিত্র শিক্ষা এবং হিকমাহর জন্য প্রস্তুত থাকে। নতুবা যখনই দেওয়া হোক যুক্তি, বিজ্ঞান – নেবে না। কারণ আল্লাহর দেওয়া ধারাবাহিক পদ্ধতি হিকমায় পূর্ণ। অন্তরের পবিত্রতা যেকোনো ভালো কিছু অন্তরে প্রবেশের পূর্বশর্ত।এই ধারাবাহিক পদ্ধতিই দাওয়াত, ইসলামী আন্দোলনের একনিষ্ট কর্মী গড়ে তুলতে, ইসলামের নেতা তৈরি করতে ব্যবহার করতে হবে…এটাই আল্লাহর ধারাবাহিক পদ্ধতি, প্রজ্ঞাময় কুরআনের (সূরা ইয়াসিন) প্রজ্ঞাময় (বাস্তবতাময় কল্যাণকর-সফলতার) পদ্ধতি। যার বাস্তবিক দৃষ্টান্ত রাসূল (সাল্লল্লাহু ওয়া সাল্লাম) ও পরবর্তী বংশধররা রেখে গেছেন।সুতরাং প্রজ্ঞাময় কুরআনের ট্রাটেজিক প্ল্যান আর আমাদের ইসলামী মনন, দাওয়াহ, সংগঠন এবং ইসলামী নেতা তৈরি হওয়ার জন্য ঠিক এই ধারাবাহিক পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা একবার গভীরভাবে দেখা দরকার…নতুবা পূনরায় শুরু করতে হবে আল্লাহর দেওয়া পদ্ধতিতে – কারণ প্রজ্ঞাময়

Category

Show more

Comments - 4